আরে, রুটিন করে মানুষ না, রোবোটেরা চলে!

0

 পোস্টটি শিক্ষার্থীদের জন্য! 

আপনার যদি রুটিন মেনে চলাকে যান্ত্রিক বলে মনে হয়, তাহলে নিচের ছোট্ট টেস্টটি একবার নিয়ে দেখবেন।

টেস্টটি হলো:

আজ থেকে সকালের ব্রেকফাস্ট রাত ৯ টায় করবেন, 

ঘুম থেকে উঠেই আবার ঘুমাতে যাবেন, 

দুপুরে গোসলের পরে মাঠে খেলতে যাবেন, 

১০ AM এর কলেজ বাদ দিয়ে ১০ PM এ কলেজে যাবেন,

আরো ভালো হয়, যদি নামাযগুলোও এলোমেলো করে ফেলতে পারেন। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নামায পড়ে কী লাভ? যোহরের সময়ে ফজর পড়বেন, আসরের সময়ে বিতর পড়বেন, এশার সময়ে মাগরিব। সমস্যা আছে?

এভাবে এক সপ্তাহ চেষ্টা করুন। তারপর আপনার জীবন যদি আউলা-ঝাউলা না হয়ে যায়, তাহলে এসে কমেন্ট করবেন। আমি এ পোস্ট মুছে ফেলবো।

শুধু আপনাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আপনি নিজে নিজে রুটিন মেনে চলা ছাত্রগুলোকে যান্ত্রিক ভাবতে শিখেন নাই। আপনার আশেপাশের মানুষ, আপনার আশেপাশের পরিস্থিতি আপনাকে এটি ভাবতে শিখিয়েছে।

রুটিন করে চলাকে আমরা একেবারে আণুবীক্ষণিক স্কেলে হিসেব করে ফেলি। এই যেমন ধরুন, আমি সকাল ঠিক ৫ টা ০১ সেকেন্ডে ঘুম থেকে উঠবো, সকালে ঠিক ৬ টা থেকে ৭ টা ৩৯ মিনিট পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞান পড়বো। তারপর ঠিক ৫ মিনিট ব্রেক নিয়ে আবার গণিত শুরু করবো, ঠিক ৯ টা ১৫ মিনিটে পড়াশোনা থেকে উঠবো, ঠিক ২০ মিনিট ধরে সকালের নাস্তা করবো, তারপর ১০ টায় কলেজ, তার ঠিক ১৫ মিনিট আগে কলেজের জন্য রওনা দিবো। ১০ টা বাজার ৫ মিনিট আগে কলেজে পৌঁছে যাবো। এবং এটা চলতে থাকে ঘুমানো পর্যন্ত।

এমনকি আমি এরকমও দেখেছি, কেউ কেউ টয়লেটে যাওয়ার জন্যেও বান্ধা ১০ মিনিট রেখে দিয়েছে, যদিও সে জানে না তার আদৌও ১০ মিনিটে কাজ শেষ হবে কিনা।

এই প্রজাতিকে যান্ত্রিক বলার সম্পূর্ণ অধিকার আপনার আছে। কিন্তু সেটা বলেও খুব একটা লাভ হবে না। কারণ, প্রজাতির প্রায় প্রত্যেকটা শনিবারের দিন রুটিন মেনে চলে, রবিবারের দিন একটু ক্যাচাল লাগে, তাই সারাদিন নষ্ট হয়। রুটিন ভেঙে ফেলেছে বলে সোমবারটা কাটে হতাশায়। আবার মঙ্গলবার থেকে শুরু হয় নতুন রুটিন বানানোর সংগ্রাম, যেটা চলে শুক্রবার পর্যন্ত। সপ্তাহ শেষ।

তাহলে আমি আসলে বলতে কী চাচ্ছি?

দেখুন, ওইটা রুটিন নয়। রুটিন হলো কোনো একটা কাজের জন্য একটা সময় বের করে রাখা, সেই কাজটি সেই সময়ের ভেতরে সম্পন্ন করে ফেলার চেষ্টা চালানো। না পারলে সেইসময়েই ঠিক করে ফেলা যে আগামীতে কখন আপনি কাজটি করতে পারবেন। কিন্তু আমি একেবারে কাঁটায় কাঁটায় চলার কথা বলছি না।

রুটিন হবে নিজের পছন্দমতো। রুটিন সম্পুর্ণ আপনার ওপর। সময় খুঁজে বের করার দায়িত্ব আপনার। কারণ ওইটাকে অনুসরণ আপনাকেই করতে হবে। 

তবে যদি আপনার সময় বের করতে অসুবিধা হয়, তাহলে একটা বুদ্ধি দিতে পারি, স্টেপ বাই স্টেপ। আশা করি আপনার উপকারে লাগবে।

স্টেপ ১: নামাযের সময়গুলো নির্দিষ্ট করুন। নামাযের সময় নির্দিষ্ট হলে আপনার ঘুমের টাইমও নির্দিষ্ট হয়ে যাবে। (অবশ্যই ফজরের নামাযের আগে টানা ৬ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। আর সেটা করতে চাইলে কোন সময়ে ঘুমাতে যেতে হবে সেটা অটো আপনি জেনে যাবেন। আর হ্যাঁ, কখনোই ফজরের নামায পড়ে তারপর ঘুমানোর চেষ্টা করবেন না। আগেই বলেছি, "টানা" ঘুম দরকার। ঘুমের মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে ঘুমালে হবে না)

স্টেপ ২: দিনের অত্যবশ্যকীয় কাজগুলোর সময়গুলো বের করুন। এর ভেতরে আপনার কলেজের সময়, আপনার প্রাইভেটের সময়, আপনার খাবারের সময়, আপনার দৈনন্দিন কাজের সময়গুলো যোগ করুন।

স্টেপ ৩: তারপর যে কাজগুলো করলে ভালো, না করলেও বিশেষ কিছু হবে না, সেগুলো বের করুন। আপনার সামনে পরীক্ষা থাকলে বা পড়ার চাপ থাকলে (বা যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজের চাপ থাকলে) এই স্টেপ এড়িয়ে যান। কারণ ওইটা আগে।

স্টেপ ৪: তারপর আপনি গ্যাপগুলো শণাক্ত করতে পারবেন। সেই সব জায়গাগুলোতে পড়াশোনাকে ঢুকিয়ে দিন। 

হ্যাঁ, এর ভেতরে আপনার বেড়াতে যাওয়া আছে, বন্ধুবান্ধবের সাথে ঘোরাঘুরি আছে, আরো অনেক কাজ আছে। তখনও গ্যাপগুলোকে এখানে কাজে লাগাতে পারেন। যেমন, যেদিন যাওয়া সেদিনই ফিরে আসা টাইপ ট্রিপগুলোতে আমি সকালে উঠে পড়তাম, আবার রাতে ফিরে এসে যদি এনার্জি থাকতো, পড়তাম। 

ইনশাআল্লাহ, এভাবে আপনি সময়গুলোকে গুছিয়ে নিতে পারবেন। আর অন্তত আমার ভাষায় এটাইকেই বলে একজন ছাত্রের রুটিনমাফিক জীবনযাপন করা। 

আর হ্যাঁ, যেহেতু ঋতুর সাথে সাথে নামাযের সময়গুলো পরিবর্তনশীল, আর এইটাকেই আপনার রুটিনের প্রথমে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, তাই আপনার রুটিনের সময়গুলোও পরিবর্তন হবে। যার ফলে আপনি কাউকে আপনাকে যান্ত্রিক বলার বিন্দুমাত্র সুযোগও দিলেন না। 

ধন্যবাদ।


Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)